
ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী ২১ অক্টোবর সন্ধায় “বোধনের” মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বাঙ্গালী হিন্দু ধর্মলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা।পূজা কেন্দ্র করে পূজার আনুসঙ্গিকতায় কর্মরত সবাই এখন ব্যস্ত।শহর গ্রাম সবখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।প্রতিমার পূর্নরূপে সাজিয়েছেন রংতুলি কারিগরা।
এবার,সাতক্ষীরা জেলায় মোট ৫৫৭ টি মন্ডপে সার্বজনীন ও পারিবারিকভাবে আয়োজিত দূর্গাপূজা পালিত হবে।নিরাপত্তা বেষ্টিত থাকছে সব মন্ডপ গুলোতে।সুন্দর সুষ্ঠভাবে ও নির্বিঘেœ পূজা সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করবে।
জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব সঞ্জীব ব্যানার্জী জানান,করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বিস্তার প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় পূজা উদ্যাপন কমিটির ২৬ টি নির্দেশনা মেনে আমাদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে।যার কারণে হচ্ছে না ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রা।বিধিনিষেধ থাকছে দল বেঁধে বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা দর্শন করা।জনসমাগম এড়াতে স্ব স্ব মন্দির কমিটি নিজ দায়িত্ব পালন করবে।বাধ্যতা মূলক মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ জানান,করোনা ভাইরাসের কারণে এবার পূজার আনুষ্ঠানিকতা সংকুচিত করতে হচ্ছে।সম্মিলিতভাবে আনান্দটা নির্বিঘে করতে পারছি না।২১ অক্টোবর সন্ধায় “বোধনের” মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে ২৬ শে অক্টোবর বিসর্জনের মাধ্যমে এবারের দূর্গাপূজা উৎসব শেষ হবে।জেলার সাতটি উপজেলায় মোট ৫৫৭ টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।এর মধ্যে সদরে ৯৭ টি,কলারোয়ায় ৪১ টি,শ্যামনগরে ৬৫ টি,কালিগঞ্জে ৪৭ টি,আশাশুনিতে ১০৪,দেবহাটায় ২১ টি,তালা উপজেলায় ১৮২ টি মন্ডপে সার্বজনীন ও পারিবারিকভাবে দূর্গাপূজা পালিত হবে।
জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বরেয়া গ্রামের দ্বীপক মন্ডল। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে প্রতিমা কারিগরের কাজ করছেন।তিনি ১১ টি স্থানে দূর্গা প্রতিমার গড়ার কাজ হাতে নিয়ে ছিলেন। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত রংতুলিতে ব্যস্ত থাকবেন তিনি।চার জন সঙ্গী নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিমার পূর্নরূপে সাজাতে কাজ করেন। এবার এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা সর্বোচ্চ চুক্তিতে একটা দূর্গাপ্রতিমা তৈরীর কাজ হাতে নিয়ে সবগুলির কাজ শেষ করবেন।
আশাশুনির বুড়াখারআটি গ্রামের দ্বীলিপ মন্ডল গেল আষাঢ় থেকে অদ্যাবধি কাজ করেই চলেছেন।প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এখন তিনি ডিজিটাল প্রতিমাও তৈরী করেছেন। তিনি আরো জানান, জেলায় প্রায় ৯০ জনের বেশী প্রতিমা কারিগর রয়েছে।তাদের সব প্রতিমা গড়ার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। শুধু রংতুলির কাজ কিছু স্থানে বাকী আছে।দ্বীলিপ মন্ডলের ২০ জনের বেশী শিষ্য প্রতিমা তৈরী করে জীবন নির্বাহ করে বলে জানান তিনি।সারা বছর প্রতিমার কাজ করে থাকেন তিনি।
পূজা মানে আনন্দ আর সেই আনন্দ প্রনোবন্ত করতে ঢোল, তবলা, হারমনিয়াম, জিপছি, খঞ্জন প্রয়োজন হয়।সাতক্ষীরা শহরের করুনা মিউজিক এর সত্ত¡াধিকারী দ্বীপক চন্দ্র মন্ডল জানান,প্রতি বছর পূজাকে কেন্দ্র করে নতুন ও পুরনো ঢোল,তবলা,হারমনিয়াম মেরামতের কাজের ভীড় থাকে।এ বছর তার কমও ছিল না।
পূজার আরাধনার আহŸান করতে ঢাক ঢোলের প্রয়োজন হয়। ঢুলি ছাড়া পূজা পূর্নতা পায় না। সদরের বাবুলিয়া দাশ পাড়ার ইয়াংস্টার ব্যান্ড পার্টিও কর্নধার স্টম দাশ জানান,জনবল কম থাকার কারনে অনেক অর্ডার বাদ দিয়েছি।কয়েকটি মন্ডপে ভাল একটা পারিশ্রমিক এর মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আগামীতে আরো বড় পরিষারে ঢুলি বা বাদক সরবরাহ করতে পারব বলে আশা করছি।
প্রতিটি পূজা মন্ডপে বাহারী রং সাজাতে এবং পেন্ডেল,গেট তৈরী করে বর্ণিল রুপ দিয়ে দৃষ্টি নন্দন করে তোলে।প্রতিটি মন্ডপে ডেকোরেটর ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ীরা খুবই ব্যস্ত। সদরের আবাদেরহাট বাজারের শামছুর মাইক এন্ড ডেকোরেটর ১৩ টি মন্ডপে ডেকোরেট ও সাউন্ড সিস্টেমের দায়িত্ব নিয়েছেন।জনবল ও মিস্ত্রি সংকটে অনেক ভাড়া বাদ দিয়েছেন।
জেলার অধিকাংশ পূজা উপযাপন কমিটি পুরোহিত সংকটে চিন্তিত হয়ে পড়েন।প্রতিটি মন্ডপের জন্য একজন পুরোহিত পাওয়া মুশকিল।যথাযথ পারিশ্রমিক দিয়েও পাওয়া যায় না এবং পাওয়া গেলেও অভিজ্ঞ সম্পন্ন পুরোহিত পাওয়া খুবই কঠিন।অনেক পূজা উদযাপন কমিটি বহুদূর থেকে মোটা অংকের পারিশ্রমিক দিয়ে পুরোহিত নিয়ে থাকেন।
শেষ মূহুর্তে দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে শহর ও গ্রাম গঞ্জের কাপড়ের দোকানগুলোতে ভীড় লক্ষ করা গেছে। নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়ে পূজা মন্ডপে যেতে কারই না ইচ্ছে করে। স্বাভাবিকের তুলনায় দোকান গুলোতে বেশী বেচাকেনা হচ্ছে। শহর ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের নতুন কাপড় বিক্রিতে ব্যস্ত।ক্রেতাও বেশী।শহরের একজন কাপড় বিক্রেতা মিঠু জানান,স্বাভাবিকের তুলনায় ভাল বিক্রি করছি।পূজা উপলক্ষ্যে এখনো বিক্রি করবে বলে আশা করছেন তিনি।শহরের সুলতানপুর বড় বাজারের হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত পন্য বিক্রির দোকান গুলোতে ভীড় কাটছেই না।
শ্যামনগর বুড়িগোয়লিনী গ্রামের শ্রাবন্তী বিশ্বাস নামে এক তরুনীর সাথে পূজা উদযাপন নিয়ে কথা হলে তিনি জানান,করোনার কারণে পূজার আনুষ্ঠানিকতা খুব ভাল আশা করছি না।আশা করছি সুষ্ঠ ভাবে পূজার অন্যান্য দিক উদ্যাপন করতে পারবো।তবে,সংশয় কাটছে না। নিরাপত্তা কতটুকু দিতে পারবে প্রশাসন। এটা নিয়েও চিন্তিত।তিনি আরো জানান,“ধর্ম যার যার উৎসব সবার”এই বানীতে সবার সহযোগিতা পেলে আমরা সুষ্ঠভাবে পূজা উদযাপন সম্পন্ন করতে পারব।